ভ্যাপসা গরমে বাড়ছে অস্বস্তি
ভ্যাপসা গরম বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন নগরবাসী। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে গরমের তীব্রতায় নগরীতে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও বেড়েছে। গরমের মাত্রা আরও বাড়বে এমনই আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে এপ্রিল ও মে মাসকে উষ্ণতম মাস হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এই দুই মাসের মাঝামাঝি অর্থাত্ মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে মাসে সাধারণত ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। তবে এবার এপ্রিলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এই গরম অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে নগর জীবনে।
তাপমাত্রার সঙ্গে গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে তরুণদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। পড়াশোনা, ক্লাস, আড্ডা—কোনো কিছু তো আর থেমে নেই। কিন্তু গরমের উত্পাতে দিশেহারা অবস্থা। নানা রকম অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। তবে এ কয়েক দিনে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে অনেক তরুণ। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে।
গরমে একটু স্বস্তির খোঁজে
এই গরমে অবশ্যই কৃত্রিম এসব পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে। পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরলে একদিক থেকে যেমন গরম কম লাগবে, অন্যদিকে আরামও লাগবে। ফলে তরুণরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবে। পাতলা তাঁত ও খাদি কাপড়ের পোশাকও এ সময় পরা যায়। গরম এলেই সুতি কাপড়ের প্রসঙ্গ চলে আসে।
তরুণীদের উচিত পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ধরনটিকে প্রাধান্য দেওয়া। আর রং নির্বাচনেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এই গরমে সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা বেগুনি, হালকা নীল, বাদামি, আকাশি, হালকা হলুদ, ধূসরসহ হালকা রঙের পোশাকগুলোকে প্রাধান্য দিন। গরমে সাদা ও অন্যান্য হালকা রঙের পোশাক শুধু তাপ শোষণই করে না, সেই সঙ্গে চোখকে দেয় প্রশান্তি। তবে গরমকালে সাদা রঙের পোশাকের জয়জয়কার সবসময়ই। আবার পোশাকে খুব বেশি টাইট ফিটিংস হলেও কিন্তু সেটা খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না। একটু ঢিলেঢালা হলেই বরং ভালো হয়।
গরমের সময়টাতে খাদ্যতালিকায় গুরুত্বের সঙ্গে হালকা ও কম চর্বিযুক্ত খাবার রাখতে হবে, যা আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টিবর্ধক। গরমে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো এ সময় আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি চলে যায়। এটি পূরণ অত্যন্ত জরুরি। তাই অনেক বেশি পানি পান করতে হবে। খাদ্য তালিকার খাবারে আরও থাকবে সবজি ও প্রচুর ফল। গরমকালে ফলের প্রয়োজনীয়তা বেশি বলেই হয়তো এ সময় হরেক পদের রসালো ফলে ছেয়ে যায় বাজার। তরল পানীয়ের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের ঠাণ্ডা রস ও লেবুর শরবতের বিকল্প নেই। কিন্তু বাইরে খোলা আকাশের নিচে বানানো বিভিন্ন শরবতের প্রতি দৃষ্টি না দেওয়াই ভালো। সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা দেখতে হবে।
নাশতায় তেলে ভাজা পরোটা ও সবজি এড়িয়ে চলাই ভালো। তরুণদের ক্ষেত্রে খাবারে কমপক্ষে ৪০০ ক্যালোরির জোগান থাকা উচিত। গরমে সবজি একটা জরুরি খাবার। সেটা তেলে না ভেজে গ্রিল বা বাষ্পে ভাপ দিয়ে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে। খাবার মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবার পর ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত বা যেকোনো ফল খাওয়ার অভ্যাস ভালো। দৈনিক কমপক্ষে আট গ্লাস পানি খাওয়া উচিত হলেও এই গরমে পানি খাওয়ার অভ্যাস বাড়িয়ে দিতে হবে। সঙ্গে দুধ, ফলের রসসহ যেকোনো পুষ্টিকর পানীয় খাওয়া যেতে পারে। আর আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, তাল, তরমুজ, জামসহ বিভিন্ন রসালো ফল তো আছেই।
সব মিলিয়ে এই গরমে একটু সাবধানতা অবলম্বন করে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

No comments