অসুস্থতার সময় কী খাবেন, কী খাবেন না !!
শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপারটি মজার কোন বিষয় নয় মোটেও। ছোট কিংবা বড় যে কোন ধরণের শারীরিক অসুস্থতার সময়েই প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। আবহাওয়া বদলের জন্য ভাইরাস জনিত ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দি, জ্বর, মাথাব্যথা প্রভৃতি দেখা দেয়। বিশেষভাবে এই সময়ে প্রয়োজন হয় সঠিক পরিচর্যার। তার পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক খাদ্য উপাদান, কারণ খাদ্য উপাদান এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানে এমন কিছু খাদ্য উপাদানের কথা তুলে ধরা হলো, যা অসুস্থতার সময়ে গ্রহণ করা উচিৎ এবং উচিৎ নয়।
অসুস্থতার সময়ে যে খাদ্য উপাদানগুলো গ্রহণ করা উচিৎ
মুরগীর স্যুপ
বহু পুরনো সময় থেকেই অসুস্থতার সময়ে মুরগীর স্যুপ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। যার পেছনে রয়েছে উপযুক্ত কারণ। মুরগীর স্যুপ তৈরি করা হয় অনেক সময় নিয়ে এবং ধীরে জ্বাল দিয়ে। যার ফলে এই স্যুপে থাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান সমূহ। যার মাঝে রয়েছে- ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং অন্যান্য শরীরের জন্য উপকারি মিনারেল সমূহ। অসুস্থতার সময়ে শরীর দুর্বল হয়ে পরে। যার ফলে এই স্যুপ খাওয়ার ফলে শরীর তার প্রয়োজনীয় শক্তি পেয়ে থাকে।
গ্রিন টি
গরম এক কাপ গ্রিন টি পানের ফলে ঠাণ্ডার সমস্যার ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যাবে অনেক। এছাড়াও, গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ। শুধু তাই নয়। অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ থকার ফলে গ্রিন টি অসুস্থতার সময়ে খুব উপকারি পানীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
মধু
ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দির সমস্যার ক্ষেত্রে মধু সবচাইতে ভালো ও দ্রুত কাজ করে থাকে। ২০১০ সালের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যে সকল শিশুরা শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশনের সমস্যা ভুগছিল, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২.৫ মিলিগ্রাম পরিমাণ মধু খাওয়ার ফলে তারা অনেকটা ভালো বোধ করা শুরু করে। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী মধু প্রাকৃতিক মেডিসিনাল উপাদান হিসেবে খ্যাত।
লেবু ও লেবু জাতীয় ফল (সাইট্রাস)
জাম্বুরা, কমলালেবু এবং লেবু হলো প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ ফল। প্রতিটি ফলেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। যা ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা ও সর্দির ক্ষেত্রে খুব উপকারি। এছাড়াও, জ্বর হলে খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। এই সময়ে টক জাতীয় খাদ্য ও ফল খেলে খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি পায়। এই সকল ফল আস্ত অথবা ফলের রস তৈরি করে খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যাবে।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
এভিসির গুণাগুণের তো শেষ নেই। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্ট-ভাইরাল, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদান সমূহ। এভিসি গ্রহণে শরীরের এসিডিটির মাত্রা হ্রাস পায়। এক টেবিল চামচ এসিভি, মধু এবং বড় এক গ্লাস পরিমাণ পানি গ্রহণে শারীরিকভাবে স্বস্তি কাজ করে থাকে।
কলা
কলা উচ্চ ভিটামিন এবং শরীরে শক্তি প্রদানকারী চিনি ছাড়াও কলা পাকস্থলীর জন্য খুব উপকারি। অসুস্থতার সময়ে খাদ্য পরিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে কলা খাওয়ার ফলে খাদ্য দ্রুত ও ভালোভাবে হজম হয়ে থাকে।
রসুন
অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াম এবং অ্যান্টি-বায়োটিক উপাদান সমৃদ্ধ রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও রসুন এনজাইম এর মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে বলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার বা ডিটক্সফাই করে থাকে। ঠাণ্ডা সমস্যার স্থায়িত্বকাল কমানোর ক্ষেত্রে রসুনের ভূমিকা দারুণ।
আদা
শারীরিক অসুস্থতার সময়ে প্রবল বমিভাব দেখা দেওয়া শুরু হয়। বমিভাবের এই বিরক্তিকর সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদান আদা খুব চমৎকার কাজ করে থাকে। তবে আদা সরাসরি খাওয়ার পরিবর্তে আদা-চা তৈরি করে পান করলে বেশী উপকার পাওয়া যাবে। আদা শরীরের প্রদাহ তৈরিতে বাঁধা দান করে থাকে বলে, রোগ আর বৃদ্ধি পায় না।
অসুস্থতার সময়ে যে খাদ্য উপাদানগুলো গ্রহণ করা উচিৎ নয়
অসুস্থতার সময়ে যে খাদ্য উপাদানগুলো গ্রহণ করা উচিৎ নয়
সাধারণত যে সকল খাদ্য প্রদাহ তৈরির জন্য দায়ী, সে সকল ধরণের খাদ্য অসুস্থতার সময়ে পরিহার করা প্রয়োজন। যার মাঝে রয়েছে ময়দা, চিনি, কৃত্রিম চিনি ইত্যাদি। এখানে তেমন কিছু খাদ্যের উদাহরণ দেওয়া হলো।
চিনিযুক্ত খাদ্য
শরীরের জন্য চিনি অ্যাসিডিক। যে কারণে অসুস্থতার সময়ে চিনি ও কৃত্রিম চিনি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, যা থেকে তৈরি হতে পারে প্রদাহ। চিনির পরিবর্তে মধু খাওয়া যেতে পারে, যাতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। এছাড়াও মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে চাইলে মিষ্টি ফল খাওয়া যেতে পারে। ফলে রয়েছে আঁশ ও মিনারেলস।
চর্বিযুক্ত খাবার
মুরগীর স্যুপ খাওয়া উপকারি হলেও, মুরগী ফ্রাই খাওয়া কোনোভাবেই উপকারি নয়। যেহেতু অসুস্থতার সময়ে পাকস্থলী দূর্বল হয়ে পরে, এই সময়ে অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার গ্রহণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য
অসুস্থতার সময়ে অনেকের দুধ অথবা দুগ্ধজাতীয় জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ, দুধ মিউকাস তৈরি ত্বরান্বিত করে থাকে। যার ফলে অনেক সময় দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় কোন খাদ্য গ্রহণের পরে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে ফার্মেন্টেড দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য, যেমন দই খাওয়া যেতে পারে। এটা পাকস্থলীর জন্যেও উপকারী।
তবে ফার্মেন্টেড দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য, যেমন দই খাওয়া যেতে পারে। এটা পাকস্থলীর জন্যেও উপকারী।

No comments